ঢাকা, শনিবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

নারীর কথা শুনবে বিশ্ব  

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩৫, ২৪ নভেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৩:৪০, ২৭ নভেম্বর ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

 ২৫ নভেম্বর নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নির্মূলের আন্তর্জাতিক দিবস এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে ১৬ দিনের সক্রিয়তা প্রচারাভিযানের প্রথম দিন। এ উপলক্ষে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি সেসব নারী ও মেয়েদের জন্য, যারা বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশে সহিংসতার শিকার হয়।

অ্যাম্বাসাডরস অব চেঞ্জ- এই প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের দূত হিসেবে, আমরা সহিংসতা ও অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কথা বলতে চাই; যা লাখ লাখ নারী এবং মেয়েশিশুদের প্রতিদিন মুখোমুখি হতে হয়। বিশ্বজুড়ে নারী ও মেয়েশিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা রয়ে গেছে সবচেয়ে রীতিসিদ্ধ এবং সবচেয়ে ব্যাপক একটি মানবাধিকার লঙ্ঘন।

বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজন নারীর মাঝে একজন তাদের জীবনকালে সহিংসতা ভোগ করবে। আমদের স্বীকার করতেই হবে যে, এটি একটি বিশ্বব্যাপী মহামারী, যা নারী ও পুরুষের মধ্যে অসমান ক্ষমতা ও নৈতিক সক্রিয়তায় আবদ্ধ। ক্ষতিকারক সামাজিক নিয়ম এবং আইনের অধীন বৈষম্য এটাকে পুনরায় বলবৎ করে।

এটা প্রতিটি সমাজে দৃঢ়ভাবে নিহিত রয়েছে। তাদের জাতি, ধর্ম, বয়স, শারীরিক অক্ষমতা বা যৌন অভিযোজনের কারণে সহিংসতার ঝুঁকি বেশি রয়েছে বৈষম্যের শিকার, দুর্বল গোষ্ঠীর নারীদের জন্য। কোনো দেশেই লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা থেকে অনাক্রম্য নেই। বাংলাদেশের বর্তমান পরিসংখ্যানও বিপজ্জনক। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী প্রত্যেক পাঁচটি কিশোরীর মধ্যে একজন কিশোরী, নিকট আত্মীয়, স্বামী বা পুরুষ বন্ধুর কাছ থেকে যৌন সহিংসতার শিকার হয়।

বর্তমানে বিবাহিত নারীর ৮০ শতাংশেরও বেশি নারী, তাদের বিবাহকালীন সময়ে অন্তত একবার নির্যাতনের শিকার হন প্রায়ই পরিচিত এবং বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছ থেকে। প্রতি চারজন নারীর মধ্যে একেরও অধিক যৌন বা শারীরিক সহিংসতার শিকার হন। প্রতি ১০ নারীর মাঝে সাতজন নারী (৭৩ শতাংশ) তাদের জীবনে, অন্তত একবার গার্হস্থ্য সহিংসতার শিকার হন।

আমাদের শেখানো হয়েছে যে, সমাজে নারী ও পুরুষের বিভিন্ন ভূমিকা রয়েছে। নারী ও মেয়েদের মৃদু, বিনীত এবং বিনয়ী চরিত্র এই সমাজে প্রত্যাশিত করা হয়। প্রায়ই নারীদের তাদের মতামত প্রকাশ করা থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়। এমনকি অপব্যবহারের মুখে নারীদের চুপ থাকতেই শেখানো হয়েছে! কারণ প্রতিশোধের, প্রতিহিংসার ঝুঁকি অনেক বেশি।

নারীদের নানা ক্ষতিকারক, অলিখিত নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করা হয়। যদি তারা সামাজিক মানদণ্ডের সঙ্গে মানানসই না হয়, তবে তারা খারাপ, চরিত্রহীন নারী হিসেবে বিবেচিত হয়। ফলে যে নারীকে হয়রানি করা হয় এবং প্রায়ই নির্যাতন করা হয়, সে নারী তা নীরবে সহ্য করে। তারা সমাজের অবিশ্বাসকে ভয় করে। কারণ নির্যাতনকারীকে শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে দুর্ভাগ্যবশত এই সমাজে নারীদেরই অপরাধের জন্য দায়ী করা হয়। তাদের নিন্দিত করা হয় সহিংসতার শিকার হওয়ার কারণে তিনি কীভাবে অপরাধীর সঙ্গে মিশতেন, আচরণ করতেন অথবা তিনি কী পোশাক পরতেন। ফলে সমাজই সহিংসতার একটি অবিরাম, নিষ্ঠুর চক্র সমর্থন করে চলছে। # মি টুর বিশ্বব্যাপী প্রচারাভিযান বিস্ময়কর সাফল্যের কারণে, সমাজে দমনপ্রাপ্ত নারীদের ভূমিকার নীরব প্রতিগ্রহণকে সম্প্রতি চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে এমনকি বাংলাদেশেও সাহসী নারীরা জানান দিচ্ছেন তাদের দুঃখের কথা, এগিয়ে আসছেন তাদের হয়রানি ও সহিংসতার গল্প নিয়ে। ১৬ দিনের অ্যাক্টিভেশনের জন্য এই বছরের থিম বা প্রতিপাদ্য হলো # হিয়ার-মি টু বা # ঐবধৎ গব ঞড়ড়। এই প্রতিপাদ্যটি, গত বছরে নারীর অধিকার আদায়ের জন্য উত্থাপিত # মি টু আন্দোলনের এবং অন্যান্য সহিংসতা প্রচারণার ধারাবাহিকতা।

আমরা যদি নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার অবসান করতে চাই, তবে তার মূল এবং কাঠামোগত কারণগুলো মোকাবেলা করা জরুরি, যেমন পিতৃপুরুষতা এবং নারী ও পুরুষের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা। আমাদের আরও ন্যায়সঙ্গত সমাজের পক্ষে লড়াই করা প্রয়োজন; যাতে নারীর সমান গুরুত্ব থাকা উচিত সামাজিকভাবে, আর্থিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে এবং জীবনের প্রতিটি স্তরে।

এই পরিবর্তনের জন্য দূত হিসেবে আমরা কাজ করতে চাই এবং আমরা সেসব নারী ও মেয়েকে সমর্থন করি, যারা সহিংসতার শিকার হতে এবং সমাজ দ্বারা দমন হতে ও নীরব থাকতে বাধ্য হয়েছেন। আমরা সহিংসতার শিকার সব নারীকে সমর্থন করি এবং সেসব কর্মীকে, যারা এই নারীদের তাদের অধিকারের জন্য যুদ্ধ করতে, প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেন। বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশে আমরা সাহায্য করতে চাই তাদের কণ্ঠ জোরালো করার জন্য।

আমরা সব প্রতিষ্ঠানকে দায়বদ্ধ করতে চাই, যাতে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার সব নারী তাদের গল্পকথা বলতে পারেন, নালিশ জানাতে পারেন কর্তৃপক্ষকে। আমরা পুরুষদের অনুরোধ করি, চ্যালেঞ্জ করার জন্য সেসব বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং সামাজিক মানদণ্ডগুলো যা জোরদার করে নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ও বৈষম্যের।

আমরা আইনের অধীনে এবং ন্যায়বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে, সহিংসতার শিকার নারী ও মেয়েদের পক্ষে সমান সুরক্ষা চাই। আমরা নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় দোষী অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার এবং দৃঢ় আইনি ব্যবস্থা চাই। আমরা সরকারকে অনুরোধ করছি মেয়েদের ক্ষমতায়ন করার জন্য চিন্তাহীনভাবে বাঁধাধরা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে সরে এসে একটি উচ্চমানের, পরিপূরক শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারিত করতে। আমরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ নিশ্চিত করতে চাই, যাতে কোনো নারী বা মেয়েকে হয়রানি ও আক্রমণের হুমকির মুখোমুখি হয়ে তার শিক্ষার অধিকার ত্যাগ না করতে হয়। আমরা যৌন প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য নারী ও মেয়েদের অধিকার রক্ষার দাবি জানাই।

আমরা কর্মস্থলে, গণপরিবহনে, সব স্থানে সব নারী ও মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা নারী ও মেয়েশিশুদের ক্ষমতায়ন চাই, যাতে প্রত্যেকে তাদের প্রতিটি কথা শোনে; তারা সমর্থিত এবং প্রেরিতবোধ করে; তারা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং নিজেদের অধিকারের জন্য লড়তে পারে। আমরা সমাজের সব শ্রেণির, সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি এই আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে, যাতে তারা প্রত্যেক নারী ও মেয়ের কথা শোনে, বিশ্বাস করে  এবং সমর্থন জানায়। সব নারী যেন সহিংসতা  থেকে মুক্তি পায়।

বি.দ্র: [লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে ১৬ দিনের কার্যক্রম প্রচার, অ্যাম্বাসাডরস অব চেঞ্জ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি যৌথ বার্তা]

লেখকবৃন্দ: জুলিয়া নিবলেট, রেঞ্জে তেরিংক, বেনয়েট প্রফন্টাইন, উইনি এস্ট্রুপ পিটারসেন, মারি-এনিক বুর্দিন, হ্যারি ভারওয়েজ, সিডেল ব্লেকেন, অ্যালিসন ব্ল্যাক, সিএমজি, আর্ল রবার্ট মিলার, শার্লাটা স্কিলটার, রেনে হোলেনস্টাইন ডেরিক ব্রাউন, মিয়া সেপ্পো, বিয়াত্রাইস কালদুন, ডা. আসা টর্কেলসন, শোকো ইশিকাওয়া। লেখকরা হলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধি।


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি